কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া সেনাবাহিনীর নিজস্ব মাঠে চলছে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় লটারির নামে চলছে জুয়া বানিজ্যের রমরমা ব্যবসা। প্রবেশ টিকিটের মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করেছেন আয়োজক কমিটি, মেলাটি দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে চলছে লটারির নামে জুয়া। গত ২৪ এপ্রিল মেলা শুরু হলেও (২৬ এপ্রিল-২৫) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সেনাবাহিনীর খোলা মাঠে মেলার উদ্বোধন করেছেন এবং ২৬ এপ্রিল থেকেই চালু হয়েছে লটারি র্যাফেল ড্র।
জানা যায়, মেলা সবার জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলে ও কৌশলে প্রধান গেইটের দুইপাশে কাউন্টার বসিয়ে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে প্রবেশ টিকিট যাহার মূল্য ২০ টাকা। শুধু মেলার গেটে নয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডের মেইন পয়েণ্ট গুলোতে বসিয়ে লটারি নামে জুয়ার টিকিট বিক্রির হাট। সেই সাথে শহরে আনাচে-কানাচে শত শত গাড়িতে আকর্ষণীয় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিদিন রাত ১০টা ৩১ মিনিটে লটারির র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এই র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠান স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে টিভি ও ইউটিউব ফ্রেইজবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে সাধারণ মানুষ ও কমলমতি শিশুদের জুয়ায় আসক্ত হতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয় জানতে চাইলে মেলায় আসা সাধারণত জনতা বলেন।
কুমিল্লা কুটি শিল্প মেলার আকর্ষণই প্রবেশ টিকিট নামে যে লটারি তা কিন্তু জমে উঠেছে। অনেকেই গোল্ড, মটর সাইকেল সহ নানান পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে আমরা ও এসেছি মো: সোলেয়ায়মান বলেন, আমি পেশায় একজন অটোরিকশা চালক আজ পাঁচটি টিকিট কিনেছি কারন গতকাল আমাদের এক মারতি চালক সন্নের চেইন পাইছে যদি আমিও পেয়ে যাই।
প্রতিদিন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ লোভনীয় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ফলে আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ হুমড়ি খেয়ে লটারির টিকিট ক্রয় করছেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ও কমলমতি শিশুরাও টিফিনের টাকায় টিকিট ক্রয় করছে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুরি মানুষ, এ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। লটারির নামে জুয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না লটারির নামে এ জুয়া। জানা যায়, মেলার বরাদ্দকৃত মাঠ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্মরত অফিসার মাসুমা আরেফিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি।
অপরদিকে কুমিল্লা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অফিসিয়ালি নাম্বারে এবং কুমিল্লা পুলিশ সুপার, কুদ্দুস ভূঁইয়ার অফিসিয়ালি নাম্বারে ফোন দিলে, তারাও ফোন রিসিভ করেননি। তবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আমিরুল কায়ছার এর অফিসিয়ালি নাম্বারে ফোন দিয়ে মেলা ও জুয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মেলা সম্পর্কে জানি। তবে মাঠটি হল সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন, আয়োজক কমিটি সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টার থেকে অনুমোদন নিয়েছেন- এটার সাথে জেলা প্রশাসকের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
প্রতিবেদক বলেন, তাহলে এ বিষয়ে আপনার কোন দায়ভার নেই? তখন তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মাঠ, তারা অনুমোদন দিয়েছেন, জেলা প্রশাসক অনুমোদন দেয়নি এবং এর সাথে জেলা প্রশাসকের কোন সম্পর্ক নেই- যেহেতু জানেন তারা ভিন্নভাবে চলেন। ডিসির মন্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, সেনাবাহিনী কর্তৃক যেহেতু মাঠের অনুমোদন দিয়েছেন সেহেতু মেলার নামে জুয়া বন্ধের হস্তক্ষেপ করতে অপরগ। মেলা আয়োজক কমিটি সেনাবাহিনী থেকে মাঠ বরাদ্দ নিয়েছেন মেলার কথা বলে, তবে মেলার নামে জুয়ার ব্যবসাও চলছে বেশ রমরমা।
কেউ কেউ বলেন, হয়তো এ বিষয়ে সেনাবাহিনী অবগত নয়, এই মুহূর্তে এলাকার তৌহিদীর জনতা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মেলার নামে ১ মাস ৩০ দিনব্যাপী জুয়ার ব্যবসা বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানান। অন্যথায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও তৌহিদী জনতা ফুসে উঠলে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনীকেই এর দায়ভার নিতে হবে।