বাবা অনেকদিন হয়ে গেল তোমার সাথে কোন কথা হয় না! তোমাকে দেখছি না বেশ অনেকবছর হয়ে গেলো। হঠাৎ চোখ বন্ধ করতেই তোমার কথা মনে পড়লো। মনে পড়ল তোমার সেই আওয়াজ। প্রতিদিন বাড়ি ফেরার আগে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে তোর জন্য কি আনবো?
আমি এত বড় হয়ে যাওয়ার পরেও প্রতিদিন তুমি জিজ্ঞেস করতে তোর জন্য কি চিপস আনবো? মাঝে মধ্যে নাস্তার টেবিলে একসাথে বসে যখন নাস্তা খাইতাম, তখন তুমি মজা করে অনেক কথাই না বলতে, কতই না রসিকতা করতে! সবার সাথে হাসিখুশি ছিল আমাদের সেই পরিবার।
মাঝেমধ্যে তোমার গলা জড়িয়ে ধরে বলতাম বাবা আমাদেরকে কোথাও নিয়ে চলো, যখন আমার শরীর খারাপ হতো তুমি কতই না অস্থির হয়ে যেতে। আজ আমাকে নিয়ে চিন্তা করার ও অস্থির হওয়ার কেউ নেই বাবা। সব আবদার ও কষ্ট গুলো অনেক বছর মনের গভীরে বাসা বেধেছে।
মাঝে মধ্যে ফোটা ফোটা অশ্রু ফেলে নিজেকে হাল্কা করার চেষ্টা করি। যেদিন তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে, কে জানতো সেদিনই হবে তোমার শেষ সময়। অন্যের লাশ কাঁধে নিয়ে এক-পা, দু-পা করে যখন তুমি শেষ বিদায় দিতে যাচ্ছিলে। কিন্তু কে জানতো বাবা তুমিই তোমার বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছো।
বাবা তুমি নিজের হাতেই নিজের বিদায়ের প্রস্তুতি নিলে, নিজেই নিজেকে গোসল করালে, নতুন পাঞ্জাবি, নতুন টুপি আতর মাখা সে সুগন্ধি তোমার শরীরে। কে জানতো সেটাই হবে আমাদের তোমার সাথে শেষ দেখা। তোমার লাশ যখন কাধে নিয়ে চলে যেতে ছিলে, বারবার পিছন ফিরে তাকাতে ছিলে তোমার পরিবার।
কখনো তোমাকে বলিনি যে, তোমায় কত ভালোবাসি বাবা। আজ তোমাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার ইচ্ছা করে সবার মত বাবা বলে ডাকি, ছোট বেলার মত সব কিছুর জন্য বায়না করি। কোথাও অভিমান করে চলে গেলে, ফিরিয়ে আনতাম।
কিন্তু যেখানে তুমি আছো সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার তো কারো ক্ষমতা নাই বাবা। অনেক কষ্ট হয় বাবা, কাউকে বলতে পারিনা, নিজের কষ্টগুলো লালন করে চলছি। তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার মেয়ের অশ্রু দিয়ে লেখা এই খোলা চিঠি। কষ্ট করে পড়ে নিও বাবা😥
কষ্টভরা ক্লান্ত হৃদয়ে তোমাকে লেখা বাবা।
লেখক: ফ্রিল্যান্সার উম্মে সালমা, সিনিয়র সেলস অফিসার: হারবার আইটি ইনস্টিটিউট